,

কেঁচো খুড়তে বেরিয়ে এলো সাপ!

মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজপত্র দিয়েই চলছে

আউশকান্দির অরবিট হসপিটালের কার্যক্রম

মতিউর রহমান মুন্না: নবীগঞ্জের আলোচিত আউশকান্দি বাজারে অবস্থিত অরবিট হসপিটালের শিশু-কিশোর ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে প্রতারণার ঘটনায় ইউএনও তদন্ত করতে গিয়ে দেখলেন ‘মেয়াদ নেই ট্রেড লাইসেন্স ও সিভিল সার্জনের অনুমতি পত্রের’ বিগত ২০১৭ সাল থেকেই মেয়াদোর্ত্তীর্ণ কাগজপত্র দিয়েই চলছে হসপিটালের কার্যক্রম। এসব দেখে তাৎক্ষনিকভাবে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা না নিলেও বৈধ কাগজ পত্রের বিষয়ে ইউএনও বলছেন- তিনি নাকি বিষয়টি যাচাই-বাচাই করে দেখছেন, প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। কেঁচো খুড়তে সাপ বেড়িয়ে আসার মতো এ ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশাসনের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অভিযোগ রয়েছে, হসপিটাল কর্তৃপক্ষের অহরহ হুমকি-ধামকিতে নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছেন চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে অর্থ লোভী চিকিৎসকের প্রতারণার শিকার হওয়া শিশুর পরিবার। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে শিশু ইসমত নাহার জিবার মা শিরিনা আক্তার হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা সিভিল সার্জন, জেলা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যদিও ইতিমধ্যে হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এড. আবু জাহির এমপির প্রস্তাবে জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভার সিদ্ধান্তক্রমে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন-হাসান অরবিট হসপিটালে যান। তিনি হসপিটালের ২য় তলায় শিশু-কিশোর ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ খায়রুল বাশারের চেম্বারে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি ওই চিকিৎসক ও হসপিটালের পরিচালক মহিবুর রহমান হারুনসহ কয়েকজন লোক নিয়ে চেম্বারের গøাস বন্ধ করে ‘তদন্ত’ করেন। তিনি নাকি তাদের কাগজ পত্র যাচাই-বাচাই করেছেন। এ সময় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের পেশাগত দায়ীত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে. শিশু ইসমত নাহার জিবার মা শিরিনা আক্তার অভিযোগ করেছিলেন চিকিৎসকের প্রতারণার ঘটনার বিচার পেতে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন-হাসান বলেন, ‘অরবিট হসপিটালের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্তে গেলে দেখা যায় হসপিটালের ট্রেড লাইসেন্স ও জেলা সিভিল সার্জনের অনুমতি পত্রের মেয়াদ নেই। ২০১৭ সালেই মেয়াদ চলে গেছে। তবে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ দাবী করছে নতুন কাগজের জন্য তারা আবেদন করেছে। আবেদনের বিষয়টি যাচাই করে দেখছি। যদি তাদের আবেদনের বিষয়টি সত্য না হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগটি তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা তদন্ত করে দেখছেন।’ উল্লেখ্য, ডাঃ খায়রুল বাশার কর্তৃক সুস্থ শিশুকে অসুস্থ্য বানিয়ে উন্নত চিকিৎসার নামে আরেক প্রাইভেট হসপিটালের চিকিৎসকের কাছে পাঠানোর নামে প্রতারণার খবর দৈনিক হবিগঞ্জ সময়সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশিত হলে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ সুচিন্ত চৌধুরী ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম মোস্তফা গত সোমবার সকালে নবীগঞ্জ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুস সামাদকে সভাপতি ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ইফতেখার আলম চৌধুরী এবং মেডিকেল অফিসার ডাঃ জান্নাত আরা চৌধুরীকে সদস্য করে তদন্ত কমিঠি গঠন করা হয়। কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে তারা। আজ বুধবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুর মাকে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।


     এই বিভাগের আরো খবর